Friday, July 25, 2008

এবং নতুনতম পুরনো পোস্ট- "ক্ষমা করো, মা!"

মা, তোমার ঐ মধুর হাসিটি কতোদিন দেখা হয়নি! তোমার আঁচলের সোঁদা গন্ধ কতোদিন শুকে নিয়ে শ্বাস নালীর গভীরে অক্সিজেনের সাথে মিলে মিশে একাকার করে ফেলা হয়নি!

কতোদিন?

সেই পিচ্চিকালে মনে আছে তুমি কখনও আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতেনা। একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম, তুমি আমায় ফেলে কোথায় জানি চলে যাচ্ছ। এখনও মনে আছে, অভিযোগ করে বিশাল জোরে কান্না জুড়ে দিয়েছিলাম "এ কেমন মা?!"

এখনও হাসির পাত্রী হতে হয় সেই আঠার ঊনিশ বছর আগের কথায়!

এরপর একদিন তুমি ঘরে রইলে, আমিই বের হতে শুরু করলাম। যেই লাল জামা পরে কেজি স্কুলে যেতাম, ওটার কথা নিশ্চয় তোমার এখনও মনে আছে, না মা? পিছন থেকে দেখতে ঠিক প্রজাপতির মতো লাগত। সেই থেকে শুরু, আমার প্রজাপতির মত উড়াউড়ি।


এরপর স্কুলে যেতে যেতে একসময় কলেজ। ভোর বেলা, সকাল, দুপুর, কিংবা বিকেল, দশটা কিংবা বারটা, চারটা কি সাতটা, যে কোনও সময়, তোমার হাতের রান্না সর্বদা প্রস্তুত। আমি খেয়েই কেবল প্রজাপতির মতো উড়াল দিয়েছি। আর তুমি, দরজায় দাড়িয়ে বিদায় দিয়েই গেলে কেবল।

এভাবেই কখন ইউনি লাইফ শেষ হয়ে গেল, বুঝে উঠতে পারিনি। পড়া আর শোনা, এই দুই নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে খেয়ালই করা হয়নি, তোমার সাদা ধবধবে চামড়া আস্তে আস্তে কুচকে যাচ্ছে। হাটুর ব্যথাটা এতটুকু পরিশ্রমেই বেড়ে যায়।

আমি তখনও প্রজাপতি। কেবল বাইরেই উড়াউড়ি।

তুমি ভেবেছিলে এইবার আমার পিচ্চি সোনামনিটা একটু জিরোবে, না?

একুশ শতকে কি আর তা হয়, মা? পড়ালেখা শেষ, এবার সিভি লেখ, ভাল জব খুঁজ, এপ্লাই কর, ইন্টারভিউ ফেস কর। মায়ের আঁচল জড়িয়ে বসে থাকার আর সময় কই, মা??

তোমার মেয়ের কপাল কত "ভাল", জান, মা? বেকার বসে থাকতে হলো না একটা সপ্তাহ ও। সাথেই সাথেই জব। জান, তুমি কেমন ভাগ্যবতী মা?

তারপর একদিন তোমার প্রজাপতি মেয়েটি আবার উড়াল দিল। সারাদিন তার অফিস, ফোনেও আর কথা বলার সময় নেই। ঘর গেরস্থালি দূরে থাক, নিজের ঘরের জন্জাল পরিষ্কারেরও সময় নেই।
আদরের সবার ছোট্ট মেয়েটি, এক সপ্তাহেই কেমন পর হয়ে গেলো, না?

কি করব বলো মা? যান্ত্রিক এই যুগটাতে, মলিন হয়ে যাওয়া তোমার মুখের হাসিটি দেখারও আর সময় নেই!! তোমার আঁচলের সোঁদা গন্ধ নিতে, কিংবা তোমার কুচকে যাওয়া হাতটা ধরে একটু নির্ভরতা পেতে, আর সময় হয়ে উঠেনা।

তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যাওয়ার সময় আর পিছন ফিরে তাকানো হয়না। তুমিও কি নীরব কান্নায় অভিযোগ তুলে বলে উঠো: "এ কেমন মেয়ে?"

ক্ষমা করো আমায়, এই পোড়া মুখে সেই প্রশ্নের জবাব দেবার সাহস নেই।

ক্ষমা করো, মা। তোমার সৌভাগ্যবতী মেয়েকে তুমি তোমার আপন মহিমায় ক্ষমা করে দিও।
___________________________________________________________________

আমার সবচেয়ে সাম্প্রতিক পোস্ট-

প্রকাশকাল-
২০ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১১:২৫

5 comments:

WAhid Dilawar Al-Hakim said...

আপনার লিখাটা পড়ে নিজেকেও অপরাধী অপরাধী লাগছে।
:(
কিন্তু চাকরির কারণে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আছি বলে, চাইলেই তো আর মায়ের কাছে যেতে পারি না। :(

নিঝুম said...

বাসাতে মায়ের সাথেই তো থাকতেছেন এখনো । তারপরও যদি এমন হাহাকার.... আমাদের কি অবস্থা, বলুন তো .. :(

ochena_pothik said...

তরংগ এবং বিবেক সত্যি, কষ্ট করে পড়ার জন্য, এবং কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

বাসাতে থেকেও মায়ের সাথে মাখামাখি করতে পারিনা বলেই তো এই অবস্থা।
নিজের অবস্থা ভেবেই কুল পাচ্ছিনা, অন্যের অবস্থা কি ভাবব?

toxoid_toxaemia said...

আমার মায়ের সাথে মনেহয় সবচেয়ে বেশি কথা হয় মনে মনে, কিছু বলার আগেই কিভাবে যেন সবকিছু বুঝে যান আমার মা। আপনার এত্তো জোস লেখাটা আপনার মা-কে দেখানো উচিত ছিল।কি ঘটতো মোটামুটি কল্পনা করতে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। অশ্রুর বন্যা বয়ে যেত হয়তো দু'জনের চোখ বেয়েই। আপনার মা'র জন্য শুভকামনা। মায়েদের জন্য দোয়া করার মানুষ কমে যাচ্ছে দিনে দিনে।

ochena_pothik said...

মা'কে খুব মনে পড়ছে, এই লেখাটি হঠাত পরতে গিয়ে দেখি এই মাত্র মন্তব্য করে গেলেন টক্স।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, টক্স, আর শুভকামনার জন্যও।

মা'কে দেখাইনি লিখাটি-দেখাবার পরিকল্পনাও নেই। যদি কখনো মা দেখে ফেলেন ভুল করে, সেদিন আমি পাশে থাকতে চাইনা।

এখন আমার মা-ই উড়াল দিয়েছেন-তিন সপ্তাহর মধ্যে এক সপ্তাহ গেল।
আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি, মাও মনে মনে আমাকে ক্ষমা করতে বলছেন...।

আর আমি-মায়ের অপেক্ষায় দিন গুনে প্রায়শ্চিত্ত করছি...।