হায়ার এন্ড ফায়ার কেবল একটি ঈমেইলের ব্যাপার। জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখলাম জয়েন করার দু সপ্তাহের মাথায়, আমাদের সিনিয়র মোস্ট স্টাফকে ঢাকার ক্ষুদ্র অফিসে ট্রান্সফার করার মত অবিশ্বাস্য ঘটনা অবলোকন করে।
অফিসটাও যদিও চট্টগ্রামে, বোস্টনের হেড অফিস থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই এখানকার পরিবেশটা হাইব্রিড-এমেরিকান আর বাংগালির মিশেল। বাংগালির স্বভাবজাত পলিটিক্স আর গ্রুপিং ও দেখলাম এ কয়েকদিনেই শুরু হয়েছে (এখানকার অফিসটা ফুল সুয়িং এ চালু হয়েছে কেবল মার্চ থেকে)। আর এদিকে এমেরিকানদের "জব টাইটেল নয়, তুমি কি কাজ কর সেইটাই ইম্পরট্যান্ট" টাইপের মনোভাবও ভালভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
তাই তিন মাসের ইন্টার্নশিপ আর দেড় মাসের চাকুরির মাথায় আমার অনেকধরনের অভিজ্ঞতাই হয়ে গেছে। ইন্টার্ন হিসেবে "যা করার জন্য কেউ নাই" তা সবই করতে হয়েছে, আর এখন যদিও আমার ডেসিগনেশনটা তেমন গালভারি কিছু না, দায়িত্ব চাপায় দেয়ার সময় ভার বইবার শক্তি যাচাই করে না।
এর মধ্যে সময় বেসময়ে অফিস করে শরীরের যাচ্ছেতাই অবস্থা হলেও, একটাই প্লাস পয়েন্টঃ প্রতিনিয়তঃই শিখা হচ্ছে- নতুন কিছ। আর সবচেয়ে বেশি শেখা হচ্ছে পার্থক্যটা, আমাদের আর "ওদের" মধ্যে।
এ কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় একটু হলেও বুঝতে পারলাম, কেন "ওরা" এতো উন্নত, কেন "ওরা" সুপার পাওয়ার হয়ে বিশ্ব চালাতে পারছে।
আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় সাহস করে বলতে চাই, "ওদের" আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে দুইটা শব্দ- "থ্যাঙ্ক ইউ"।
একটা থ্যাঙ্ক ইউ দিয়ে ওরা হাজারটা কাজ করিয়ে নিতে পারে- কেবল একটা এপ্রিসিয়েশন দিয়ে সব পরিশ্রম ওরা ভুলিয়ে দিতে পারে...।
এমেরিকান এনভাইরন্মেন্টের সাথে যারা পরিচিত তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন- "ইউ হ্যাভ ডান আ গ্রেট জব, আই রিয়েলি এপ্রিশিয়েট দিস" ওদের সবচে' কমন ফ্রেস।
এই এতটুকুতেই, গত কয়েক সপ্তাহের নির্ঘুম রাত, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি, অবহেলিত শরীর- সবকিছুর যাতনা ভুলে যাওয়া যায়।
এই দু সপ্তাহ আগের কথা। আমাকে একটা বড় এসাইননেমন্ট দেয়া হল। প্রায় ১০ দিন এই নিয়ে আমার নির্ঘুম রাত, টেনশনে নাওয়া খাওয়া ভুলে যাওয়া, বেহিসেব খাটুনি। আর তারপর... একদিন এর সফল পরিসমাপ্তি হল।
যা ভাবতেও পারিনি তাই পেয়ে আকাশ থেকে পড়লাম- স্বয়ং সিইওর ধন্যবাদ মেইল - বোস্টন অফিস থেকে! তার উপর মেইলটা পুরো অর্গানাইজেশনের সবাইকে সিসি করা! মেইলের এমন ভাষা, শুনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কমেন্ট করে বসল- "ইজ হি ম্যারিড?"
একবার ভাবুন তো, এমন স্পেশালাইজড এপ্রিসিয়েশন মেইল পেয়ে, সবচেয়ে জুনিয়র স্টাফের অনুভূতিটা কেমন হবে! ।
বুঝতে পারছিলাম, এর মধ্যে কিছু আছে......।
এর সাথে সাথেই আল্টিমেট কনসিকুয়েন্স হিসেবে আসল এর পরের এসাইনমেন্ট। আপাততঃ ঐটা নিয়ে আরও দু সপ্তাহ দৌড়ের উপর থাকতে হবে।
এইটা শেষ হলে আরো বড় কাজ আসবে...ইংগিত অলরেডি দেয়া আছে।
আর এভাবেই পাচ আর দুই করে করে সপ্তাহের দিন গুলো সব পার করে দিচ্ছি...আর হাড়ভাংগা পরিশ্রম দিয়ে এমেরিকানদের এপ্রিসিয়েশন কিনে নিচ্ছি...।
মাঝে মাঝে মনে হয়, হায়রে বাঙ্গালী, যদি কেবল এই এপ্রিসিয়েশনের মূল্য বুঝতাম!!
এইটা শেষ হলে আরো বড় কাজ আসবে...ইংগিত অলরেডি দেয়া আছে।
আর এভাবেই পাচ আর দুই করে করে সপ্তাহের দিন গুলো সব পার করে দিচ্ছি...আর হাড়ভাংগা পরিশ্রম দিয়ে এমেরিকানদের এপ্রিসিয়েশন কিনে নিচ্ছি...।
7 comments:
Congratulation!! Ochena Prothik vai.
পাশা ভাই, এইটা অচেনা পথিক আফা ;-)
আফা, ইউ হ্যাভ ডান আ গ্রেট জব, আই রিয়েলি এপ্রিশিয়েট দিস - মানে লেখাটা ভালো হইসে । একটানা পড়া যায় । B-)
dhonnobad, pasha apu :).
bibek vai, er mane poroborti lekhay hat dite bolchen?
ধন্যবাদ আফা।
ইয়েস বিবেক, ইউ আর রাইট! রিয়ালি শী হ্যাস ডান আ গ্র্যাট জব। নাইস টু রীড। ;)
হোয়াট ইজ নেক্সট?
এটা আবার বলে দিতে হয় !! সিষ্টেমটা তো আপনার পোষ্ট থেকেই শিখলাম । তবে, সত্যি আপনি ভালো লেখেন অচনা :)
ওদের ধন্যবাদ পেয়ে খুশি হয়েছেন, কাজের অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন খুব ভাল কথা, কিন্তু কখনোই কাউকে আপনার দুর্বলতা পুঁজি করে আপনার ঘাড়ের উপর চড়ে বসতে দেবেন না।বাঙ্গালীরা যেমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়েনা তেমন আমেরিকানরাও নয়।আর নিজের শরীরের দিকেও খেয়াল রাখুন, আপনার কাজের জন্য এপ্রিসিয়েশন দেবে কিন্তু অসুস্থতার জন্য কেউ দেবেনা।তাই খুব বেশী খাটুনি করে অসুস্থ হয়ে পড়াটাও হবে বোকামি।আপনার জন্য আন্তরিক শুভকামনা।
এমন অনুপ্রেরনা কাজের অনেক সহায়তা করে। শুভ কামনা রইল।
Post a Comment