Friday, October 31, 2008

দু'দিনের ভিসা

[চাচার সাথে পরিচয়টা হয়েছে অফিশিয়াল কারনেই। উনি আমাদের অফিসের একটি কাজ করে দিয়েছিলেন গত জুলাইয়ে। কাজটা গোছানোর দায়িত্ব আবার দেয়া হয়ছিল আমার মত একেবারেই আনাড়ি পুচকাকে-তখনো কেবল এক মাস হলো আমি ঢুকেছি ঐ অফিসে। আমি তো উনার পরিচয় পেয়েই ভয়ে অস্থির। পরে সব ঠিকঠাক মতো হল, আর বোনাস হিসেবে এমন চমৎকার একজন মানুষের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়টাও হয়ে গেল। উনি অবশ্য চাচা হয়ে উঠেছেন আরো পরে, যোগাযোগটা অব্যাহত ছিল বলেই।
ওনার ব্লগের এই পোস্টটা পড়ে ভীষন অবাক হয়েছিলাম, আমার নিজের শহরে এমন নৃশংস ঘটনা নিত্যদিন ঘটে যাচ্ছে জেনে। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম অনুবাদ করে আমার ব্লগে দিব। অনুমতিও মিলল চাইতেই। তবে ম্যালাদিন হয়ে গেল, লিখব লিখছি করে লিখা হয়ে উঠেনি।
আজ বহুদিন পর ভাবলাম, এখনই সময়। চুম্বক অংশটা মেইলে ছিল, ঐটাই অনুবাদ করেছি। বাকিটা পড়ে নেয়ার দায়িত্ব পাঠকের হাতে তুলে দিলাম।]
ওদের গানের সুর ভেসে আসে। হৃদয়ছোঁয়া সুরে সহজ-সরল জীবনের গান। সুরেলা গান আর নৃত্যের ছন্দময়তার সাথে পা ফেলে ওরা এগিয়ে যায়, গমনপথে মিথ্যে সৌন্দর্য্যের পদচ্ছ্বাপ ফেলে।বুঝতে দিতে চায়না কাধেঁর ওপর বয়ে চলা ধাতব পাতের ভর পৃথিবীসম।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য ধাতুর ওপর কাদার কারুকাজ। তার ওপর খালি পা ফেলে ফেলে যাওয়া; “বিপজ্জনক শব্দের এর চেয়ে ভাল উদাহরণ কমই হয়। তার ওপর যদি হয় বৃষ্টি, তবে তো কথাই নেই। একটু পিছলে পড়া মানে যে কত বড় ক্ষতির আশংকা, ভাবতেই গা শিউরে ঠে!
তবুও, সাবধানি পা ফেলে তাদের পথচলা থেমে নেই। থেমে নেই গান গাওয়াও- এ যেন মৃত্যুর গান, অবিরাম মৃত্যুর পথে হেটে চলার সংগ্রামের গান।

Thursday, October 23, 2008

আজ ঘুম ভাঙ্গাতে কে যে ডাকে ইশারায়...

কতোদিন হলো? এক মাস? নাকি আরো বেশি?
হতে পারে। এমন প্রায়শঃই হয়ে থাকে। কখনও মাস-কিংবা বছরের জন্য- ইচ্ছেটা একদম মরে থাকে। মরে থাকে বললে একটু ভুল হবে, বলি ঘুমিয়ে থাকে- কুম্ভকর্ণের মতো।
লেখার ইচ্ছের কথা বলছিলাম।
অনেকদিন কিছু লেখা হয়না, মানে লিখতে ইচ্ছেই করেনা। ব্যাঙএর মতো একবার নয়, বছরে কয়েকবার হাইবার্নেশনে যাওয়া আমার এই ইচ্ছেটার নিত্য অভ্যাস।
এ কয়েক বছরের ব্লগ জীবনে এমনটা অনেকবারই হয়েছে।

ঈদের ব্যস্ততার পর অনেকটা দিনই তো চলে গেল। একবার ভেবেছিলাম বাড়িতে গিয়ে বয়সটা কিভাবে দশ বছর কমে গেল, আর সেই পিচ্চিকালের মত কত্ত মজাই না করলাম, তা নিয়ে ঈদের ছুটি শেষ হতেই লিখব।

তার আর সময় হলো কই। ছুটি শেষ তো বয়সটাও কিছু টের পাওয়ার আগেই এক লাফে বেড়ে গেল। দ্রব্যমূল্যের মত- বাড়তে গেলে একটু বেশিই বাড়ে- কমেছিল দশ, কিন্তু বাড়ল পনের। বয়স বাড়ার সাথে বাড়ল রোগ বালাই- ব্লগ আর লেখালেখিতে একদম এলার্জি ধরে গেল দেখি!- একে কি ডায়াবেটিস বলা যায়? লেখালেখি বুঝি মিষ্টি জাতীয় কিছু!!

Wednesday, September 17, 2008

জীবন মানে কি একটি অসম্পূর্ণ জিগস' পাজল?

এই দুদিনের পান্থশালায় আবির্ভূত হয়েছিলাম পরিবারের অষ্টম সদস্য হয়ে! অর্থাত আমাকে দিয়েই ভাইবোনদের সংখ্যা এক হাতে গুনার দিন শেষ হলো। শেষ প্রান্তে যখন যোগ হলাম, তখন ও প্রান্তের বড় জন স্কুলের গন্ডির শেষ প্রান্তে। এর পরের বোনেরা হয়তো তখন বেণি দুলানোর দিন পার করে দিয়েছেন। পরের ভাইটা কেবল তখন গণনা শিখছে-আমাকে দিয়ে ভাই বোনদের সংখা সমান সমান হওয়াতে ও নাকি খুব খুশি হয়েছিল। এর পরের ভাইটা অবশ্য তখনও কেবল পন্ডিত বাবু হয়ে উঠছে-যে বয়সে সব বাবুরাই তা হয়, ওর ও তখন সেই বয়স।

এত্তো ভাইবোনের আড়ালে তাই বেড়ে উঠাটা দুঃখের চেয়ে আনন্দের বেশি ছিল। খেলার সাথীর যেমন কখনো অভাব হয়নি, তেমনি হয়নি রাংগা চোখেরও...।

দেখতে দেখতে সময় চলে যায়- সময়ের "আপন গতি" যে কখনও স্রোতস্বিনী নদী কিংবা নায়াগ্রা ফলসকেও হার মানায়, তা সময় চলে না গেলে বুঝার উপায় নেই।

Thursday, September 11, 2008

রমজানঃ মাসটা কি "ফাস্টিং" এর, নাকি "ফীস্টিং" এর ?

বছর ঘুরে প্রতিবারের মত আবারো রমজান এলো। শুধু এলোই না- আসছি আসলাম করে এক তৃতীয়াংশ পারও করে দিল।

রমজান আসলেই চার দিকে একটি পরিবর্তন ঘটে যায়- লক্ষ্য করতে না চাইলেও চোখে যেন আপনা আপনিই ধরা দেয়- তাই এড়িয়ে যাওয়া যায় না-
অফিস আদালতের পরিবর্তিত সময়টা চোখে ঠিক সেভাবে না পড়লেও ধরা পড়ে রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের পরিবর্তিত এবং সুনির্ধারিত সময়।
মানুষের রোজা রাখা ক্লান্তভাব তেমন ভাবে চোখে না পড়লেও চোখে পড়তে বাধ্য হোটেল রেস্তোরাগুলোর অকস্মাত "হিজাব" অবলম্বন আর হিন্দু হোটেলের আধিক্য।
টিভির সংবাদ পাঠিকাদের মাথায় অতি কষ্টে উঠে যাওয়া আঁচলখানির কথা আর নাই বা বললাম।

Friday, September 5, 2008

আল জাযিরার সাথে আধা দিন ...(৩)

পরের দৃশ্য ছিল সখিনার বাবার ইন্টারভিউ।উনি বলছেন আর আমি অনুবাদ টা লিখে নিচ্ছিলাম। গ্রামের একজন সহজ সরল অল্পশিক্ষিত বাবা হয়েও শিক্ষার গুরুত্ব উনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, আর তাই উনার মেয়েকে শিক্ষিত করতে উনার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে উনি কখনও পিছপা হননি। আজ তিনি মনে করেন উনার মেয়েকে এমন পর্যায়ে পৌছে দিয়েছেন, মেয়ে বিয়ে দিতে আর উনাকে যৌতুকের সরনাপন্ন হতে হবে না। এতটুকু বলতেই ইন্টারভিউর সমাপ্তি ঘোষনা করা হলেও উনি জানালেন এখনো উনার সবটুকু বলা হয়নি। উনি আরো বলতে চান। এর বেশি সময় দেবার মত সময় ওদের হাতে নেই বলতেই বুঝা গেল একটু মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন উনি। আমাকে জানালেন উনি শেষ করতে চান "আমার মতে দেশের সব নাগরিকের উচিত নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তুলতে কোনো প্রকার অবহেলা না করা" এই কথাটা দিয়ে। অগত্যা অনুবাদে কথাটা যুক্ত করে দিলাম।

Tuesday, September 2, 2008

আল জাযিরার সাথে আধা দিন...(২)

গতকাল আসলেই তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম, তাই আসল কথা অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

বাদ পড়ে গেছে, গ্রামের বাড়িতে পৌছা মাত্রই, উঠোনে শুকোতে দেয়া লাল লাল মরিচ ওদের প্রথম আকর্ষন করে। সেই মরিচ দেখে ওদের মাথায় বুদ্ধি এল, এ দিয়েই সখিনার মা'কে পরিচয় করিয়ে দিবে ওরা। ওহহো, যেই মেয়েটির বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, তার নামটাই যে সখিনা, তাই বোধহয় এতোক্ষণ বলে উঠা হয়নি। তো এতোক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এ হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামের কোন ও এক সখিনার বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠার গল্প।

Monday, September 1, 2008

আল জাযিরার সাথে আধা দিন...

‘মিডিয়ার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছেঃ “মিডিয়ার কাছে “বাংলাদেশ” বলতে ঠিক কি বুঝানো হয়?”’ প্রশ্নটা করছিলাম আল জাযিরার নিউজ প্রেজেন্টার এওয়ার্ড উইনার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মুসলিম সোহেল রহমান কে।
নিশ্চয় ভাবছেন সুযোগটাই বা কোথায় পেলাম? হুম, তাই বলতেই আজ অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও, রমজানের ঠিক আগের দিন রমজান বিষয়ক পোস্ট না করে এমন একটা পোস্ট লিখতে ব্লগে ঢুকলাম।
ঘটনার শুরু গত সোমবারের অফিসের স্টাফ মিটিংএ, যখন জানানো হল আল জাযিরার প্রতিনিধি আসবে আমাদের ইউনি কভার করতে, আগামী সোমবার। প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেল ওদের জন্য নানা আয়োজনের। অন্যান্য প্রতিবার আমাকে এইখানে কোনো না কোন দায়িত্ব দিয়ে রাখলেও এইবার তেমন কোনো দায়িত্ব ছিল না ভেবে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছিলাম পুরো সপ্তাহ জুড়েই।
আজ যথারীতি চলে আসল আল জাযিরার ৪ জনের একটা টিম। সিনিয়র স্টাফদের ব্রিফিং, এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর আর ডীন মহোদয়া গণ দের ইন্টারভিউ ও নিয়ে ফেলল ওরা, সেই সাথে ক্লাসরুমের কিছু ছবিও।
তারপর হঠাত জানান হল, এতোদিন ধরে ছাত্রীদের দিয়ে যত্ত সব কর্মকান্ড দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এইসব ওরা তুলতে চায়না, ওদের ইচ্ছে কোন ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি ঘুরতে যাবে আর দেখাবে এইখানে ঠিক কত গ্রামীণ পরিবেশের মেয়েরা আসার সুযোগ পেয়েছে।
উড়ে এসে জুড়ে বসানোর মত আমাকে এনে বসিয়ে দেয়া হল ওদের সাথে গাড়িতে, যেতে হবে চন্দনাইশ, যা কিনা প্রায় এক ঘন্টার পথ চট্টগ্রামের মেইন টাউন থেকে।

Sunday, August 17, 2008

মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড এনি

এনির নামটা প্রথম শুনেছিলাম, থুক্কু পড়েছিলাম, বসের ইমেইলের সিসি ফিল্ডে। ইমেইলটি ছিল অঘোষিত এক্সেপ্টেন্স লেটার, আমার ইন্টার্নশিপ এপ্লিকেশনের।
এনির সাথে দেখা হয়েছিল পরেরদিন অফিসে গিয়ে। খুব সুন্দর একটা টোল পড়া হাসি দিয়ে ধবধবে সাদা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বরণ করে নিল চাইনিজ চেহারার মেয়েটি। জানতে পারলাম ওর জন্ম তাইওয়ানে হলেও ছোট বেলায় এমেরিকায় মাইগ্রেট করে এখন ও পুরোদস্তুর এমেরিকান। আপাততঃ মাসখানেকের জন্য বোস্টন অফিস থেকে ওকে পাঠানো হয়েছে চিটাগং অফিসটা সেটল করা পর্যন্ত থাকার জন্য।

তখনকার ছোট্ট অফিসটায় জুনিয়র সিনিয়র বস সাবর্ডিনেট সবাই মিলে একটা টেবিলের চারপাশে বসে যার যার ল্যাপটপে কাজ করার এক অদ্ভুত সিস্টেমে গিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।প্রতিদিনই মিটিং হতো গত কর্ম দিবসের নানা আপডেট নিয়ে, আর আমার কাজটা ছিল মিটংএ বসে মিনিট টাইপ করা। এনি ছিল তখনো আমার অলিখিত সুপারভাইজার। ওর কাছ থেকেই নানান ধরনের কাজের এসাইনমেন্ট পেতাম আর কাজ শেষে রিপোর্টও করতাম ওকেই।

বস বস শুনালেও ২৫/২৬ বছরের এই প্রচন্ড কাজপাগল মেয়েটি (মহিলা বললে ভুল হবে) কখনোই বস মনে হয়নি। সদা হাস্যোজ্জল এনির স্বভাবই ছিল গম্ভীর মুহুর্ত গুলো তে ওর বিখ্যাত অট্টহাসি কিংবা একটা রসাত্মক কমেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে হাল্কা করে তোলা।

Saturday, August 2, 2008

চিঠি

কতোদি-ইন হয়ে গেল, চিঠি লিখা হয়না! সেই আবেগ মাখা ভাষার, নানান রঙ্গের, নানান ঢঙ্গের, নানান ভাষার চিঠি- কতইনা লিখেছি একসময়।

এখন বুঝি ভুলে যেতে বসেছি চিঠি লিখার ভাষা।

প্রথম চিঠি কবে লিখেছিলাম? মনে পড়ে চার বছর বয়সে মা-বাবার সাথে যখন পাড়ি জমিয়েছিলাম , সেই দূর অজানার দেশে, তখন থেকেই আমার চিঠি লিখার শুরু। "আলিফ বা" আর এবিসিডি তখন শেখা হয়ে গেলেও বাংলা মায়ের বর্ণমালার সাথে তখনও কেবল পরিচয় হবে, হচ্ছে। সখ্যতা হয় আরো পরে- বাবা যখন পার্মানেন্ট ইঙ্কে একটা ঝুলন্ত বোর্ডের গায়ে বর্ণমালা লিখে ঝুলিয়ে দিলেন চোখের সামনে- আর মা যখন দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বাল্য শিক্ষা ধরিয়ে দিলেন হাতে-তারপর থেকে।

Friday, August 1, 2008

একটু এপ্রিসিয়েশন এবং...

খুব বেশি দিন হয়নি আমি এই অফিসে জয়েন করেছি। এখনো স্টুডেন্টের গন্ধ যায়নি গা থেকে। অস্থায়ী ইন্টার্নশিপ করতে করতেই সম্পর্কটাকে আরেকটু স্থায়ী করে নিলাম। আরেকটু স্থায়ী বল্লাম, কারণ এমেরিকান অফিসের বাংলাদেশ অফিসে কেউই স্থায়ী নয়। সবারই একবছরের কন্ট্রাক্ট।
হায়ার এন্ড ফায়ার কেবল একটি ঈমেইলের ব্যাপার। জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখলাম জয়েন করার দু সপ্তাহের মাথায়, আমাদের সিনিয়র মোস্ট স্টাফকে ঢাকার ক্ষুদ্র অফিসে ট্রান্সফার করার মত অবিশ্বাস্য ঘটনা অবলোকন করে।

অফিসটাও যদিও চট্টগ্রামে, বোস্টনের হেড অফিস থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই এখানকার পরিবেশটা হাইব্রিড-এমেরিকান আর বাংগালির মিশেল। বাংগালির স্বভাবজাত পলিটিক্স আর গ্রুপিং ও দেখলাম এ কয়েকদিনেই শুরু হয়েছে (এখানকার অফিসটা ফুল সুয়িং এ চালু হয়েছে কেবল মার্চ থেকে)। আর এদিকে এমেরিকানদের "জব টাইটেল নয়, তুমি কি কাজ কর সেইটাই ইম্পরট্যান্ট" টাইপের মনোভাবও ভালভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

তাই তিন মাসের ইন্টার্নশিপ আর দেড় মাসের চাকুরির মাথায় আমার অনেকধরনের অভিজ্ঞতাই হয়ে গেছে। ইন্টার্ন হিসেবে "যা করার জন্য কেউ নাই" তা সবই করতে হয়েছে, আর এখন যদিও আমার ডেসিগনেশনটা তেমন গালভারি কিছু না, দায়িত্ব চাপায় দেয়ার সময় ভার বইবার শক্তি যাচাই করে না।
এর মধ্যে সময় বেসময়ে অফিস করে শরীরের যাচ্ছেতাই অবস্থা হলেও, একটাই প্লাস পয়েন্টঃ প্রতিনিয়তঃই শিখা হচ্ছে- নতুন কিছ। আর সবচেয়ে বেশি শেখা হচ্ছে পার্থক্যটা, আমাদের আর "ওদের" মধ্যে।

এ কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় একটু হলেও বুঝতে পারলাম, কেন "ওরা" এতো উন্নত, কেন "ওরা" সুপার পাওয়ার হয়ে বিশ্ব চালাতে পারছে।

Friday, July 25, 2008

এবং নতুনতম পুরনো পোস্ট- "ক্ষমা করো, মা!"

মা, তোমার ঐ মধুর হাসিটি কতোদিন দেখা হয়নি! তোমার আঁচলের সোঁদা গন্ধ কতোদিন শুকে নিয়ে শ্বাস নালীর গভীরে অক্সিজেনের সাথে মিলে মিশে একাকার করে ফেলা হয়নি!

কতোদিন?

সেই পিচ্চিকালে মনে আছে তুমি কখনও আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতেনা। একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম, তুমি আমায় ফেলে কোথায় জানি চলে যাচ্ছ। এখনও মনে আছে, অভিযোগ করে বিশাল জোরে কান্না জুড়ে দিয়েছিলাম "এ কেমন মা?!"

এখনও হাসির পাত্রী হতে হয় সেই আঠার ঊনিশ বছর আগের কথায়!

এরপর একদিন তুমি ঘরে রইলে, আমিই বের হতে শুরু করলাম। যেই লাল জামা পরে কেজি স্কুলে যেতাম, ওটার কথা নিশ্চয় তোমার এখনও মনে আছে, না মা? পিছন থেকে দেখতে ঠিক প্রজাপতির মতো লাগত। সেই থেকে শুরু, আমার প্রজাপতির মত উড়াউড়ি।

পুরনো পোস্ট ২- স্বার্থপরের পদাবলী

প্রেক্ষাপটঃ নভেম্বর ২০০৭। প্রলয়ংকরী সিডর বয়ে গেল বাংলাদেশের উপর দিয়ে।

১৫ তারিখ রাত
...............
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস শুনেছি
নয় নং মহা বিপদ সংকেত
পুন: পুন:বার উচ্চারিত হচ্ছে চতুর্দিকে
জলোচ্ছ্বাস ও হতে পারে
দশ কিংবা পনের ফুট উঁচু

সুরক্ষিত দুর্গে আমার বাস-
পাহাড়ের পাদদেশে
সী লেভেলের অনেক উঁচুতে
সারা শহর যখন সেদিন তলিয়ে গিয়েছিল
সেদিনও আমাদের এই দুর্গ সদৃশ দালানে- গেটতক পানি আসতে পারেনি
যাক সে কথা,
আজ ভাবছি, কি আর হবে এমন?
মোটা পুরু কাঁচের জানালা বন্ধ করে দিলাম
থাই এলুমিনিয়ামের নিশ্ছিদ্র বেষ্টনী
শীতের কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়া হাওয়া নেই
তবু সুরক্ষার জন্য গায়ে কাঁথা জড়াই
বিদেশী কম্বলও রাখা পায়ের কাছে-
পাছে রাতে শীত বেড়ে যায়
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম রাত
হুশ হাশ শব্দে মাঝে মাঝে ঘুমে ছেদ পড়েনি তা নয়
আবার কাত ফিরে দ'চোখ বুজে স্বপ্নে ডুবি
এই তো আমি- এক নিঠুর স্বার্থপরের প্রতিচ্ছবি

পুরনো পোস্ট ১- তুমি এসেছিলে.........

তুমি এসেছিলে, অনাহূত কিংবা অপ্রত্যাশিত অতিথি হয়ে নও- অত্যন্ত প্রত্যাশিতভাবে, একেবারে ঠিক সময়টাতেই, খুব হিসেব নিকেশ করেই। তোমাকে বরন করে নেয়ার সে কি প্রচেষ্টা ছিল আমাদের। বরন টা তোমাকে ঠিক ভাবেই করেছিলাম- জীবনের ছকটাতেও নিয়মমতো লাগিয়ে দিলাম পরিবর্তনের ছোঁয়া।

প্রথম কয়েক দিন তোমায় পেয়ে খুশির অন্ত ছিল না। তুমি আর তোমার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহারটাকে চিরাচরিত নিয়মে কন্ঠে ধারনের প্রতিযোগিতা। এমনকি কম্পিউটার আর এম পি থ্রী প্লেয়ারেও তার সরব উপস্থিতি জানিয়ে দিল- তুমি এসেছ।
রাত জেগে তোমায় পাহারাও যে দিইনি কয়েকদিন তা নয়। অবশ্য কারনটা ছিল ভিন্ন। শুনেছি ঐ সময়টাতেই তোমার উপহারের ডালি খুলে বস- তাই লোভটা সামলাতে পারিনি-এই আর কি।

তবে প্রথম কয়েক দিনে যা হল এই ই সব......। উতসাহটা কালের পরিক্রমায় যথারীত দমে গেল। মাঝের কয়েকদিনে তো মনেই ছিল না তোমার উপস্থিতির কথা। শুধু ক্লাস, পড়া আর নিয়মিত কাজের ফাঁকে ঐ ক্লান্ত শরীরটার সুবাদে যা একটু বুঝছিলাম তাই। তোমার আগমনে জীবনের ছকে কি জানি একটা পরিবর্তন এসে গিয়েছিল বটে (তা অবশ্য পরিবেশের সাথে মিল রাখতে গিয়েই-সবাই যা করছে আমি কেন ব্যাতিক্রমী হব), কিন্তু মনে মগজে যা আনব ভেবেছিলাম তা আর আসল কই?

সব কাজতো চলেছেই আগের মতোই-ক্লাস, পড়ালেখা, টিভি দেখা, সেই সাথে নতুন যোগ হল - এই সামহোয়্যার ইনে ঢু মারা...(শুধু ঢু মারা বললে ভুল হবে বোধহয়- আবাস গড়া)।

তুমি আসার পর সময়টা কেমন তাড়াতাড়ি চলে গেল, টেরই পেলাম না। কখন ভোর হয়, আর কখন রাত, বুঝার সাধ্যি নেই। তারপর......। একদিন হঠাত টের পেলাম তোমার যাওয়ার বেলা হয়ে এল। তোমার উপস্থিতির যে আনন্দ, তার চেয়ে তোমার বিদায়বেলার উতসবের আনন্দটা অনেক বেশি। আর সেই সাথে প্রস্তুতিরও অনেক ব্যাপার থাকে।হঠাত মনে পড়ল, অনেক কাজই তো বাকি রয়ে গেল। এরপরের কাহিনী আর কি বলব- রাতদিন ঘুরাঘুরি- এখানে ওখানে, নানা রং এ সজ্জিত আর নবতর উদ্ভাবনে মেতে উঠা বিপণি বিতান গুলোয় ঢু মারার অন্তহীন প্রতিযোগিতা। ঘরের কোনটা ক্রমেই ভরে উঠল বর্ণিল সব কাগজের প্যাকেটে। আর ঘরের আরেক কোণে চুপটি মেরেই বসে রইলে তুমি, অযত্নে আর অবহেলায়......। সেই সাথে তোমার ঐ শ্রেষ্ঠ উপহার...... আবার ধুলো মলিন।

হঠাত দেখি তোমার যাওয়ার সময় হয়ে এল ...। আজ যাব কি কাল যাব করে একটা দিন রয়েই গেলে আমাদের মাঝে। জানিনা কি এক অভিমান নিয়ে আজ তুমি চলে যাচ্ছ...।
তখনি মনে হল, -" আরে একি! এভাবেই চলে যাবে তুমি। আয় হায়, তোমার জন্য তো কিছুই করা হল না......।" মনটা কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না তুমি এভাবে চরম অবহেলায় আর অযত্নে চলে গিয়ে বিদায় নেবে অ-নে-ক দিনের জন্য।
যাবেই যখন আর তো রেখে দেয়ার উপায় দেখিনা। তোমার সময় যে শেষ। নিজেরই চুল টানতে ইচ্ছে করছে আজ। কেন যে আগে একটি বার মনে হল না...।
আচ্ছা, তুমি আবার আসবে তো আমার জীবনে?? আচ্ছা, তোমার মনে আছে, গতবার যখন তুমি এসেছিলে আমাদের মাঝে আর ও কতজন ছিল। আজ অনেকেই নেই, তোমায় আর একটিবার দেখে যেতে পারল না। ভাবতেই মনটা কি এক অজানা আতংকে শিহরিত হয়ে উঠে......... তোমায় আরও এক বার দুচোখ ভরে দেখতে পাব তো? নাকি এক বুক অভিমান নিয়ে যাওয়ার বেলায় আঁড়ি পেতে দিলে?
যদি তাই হয়, তবে এই পাহাড় সমান পাপ নিয়ে আমার মুক্তির আর কোনো উপায় আছে?
যাওয়ার বেলায় একটিবার দয়া করে মুখ ঘুরিয়ে বলে যাও। আচ্ছা তোমার কি চোখ আছে? একবার ফিরেই দেখ না - আমার চোখের অশ্রুর দিকে তাকিয়েও কি আমার প্রশ্নের জবাব দিবে না?
............
তুমি তো পবিত্র জানতাম। এতো নিষ্ঠুর হতে কিভাবে পারলে, হে রমজান মাস?

_______________________________________________________

আমার অন্য বাংলা ব্লগে প্রকাশিত আমার ভাল লাগা কিছু লেখা এখানে পারাপার করার প্রচেষ্টায় এইটাই প্রথম প্রয়াস।

লেখাটি গত ঈদের আগের দিনে লেখা।

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৫

Thursday, July 24, 2008

এই পথে পথিকের পদার্পন

...এবং পথিক এই জগতে পদার্পন করিল।

এই জগতে ইহাই তাহার প্রথম পদার্পন নহে। ইতোপূর্বে নানা রূপে নানা রংএ এরূপ আরও কতিপয় জগতে পথিক পদার্পন করিয়াছিল। কিছুকাল পদব্রজ পালন করিয়া পরবর্তীতে ক্লান্ত পদভারে স্তিমিত হইয়া পড়িয়া থাকিয়াছে।

এই বারও পথিকের পথচলার কি হাল হইবে এখনই বলিবার উপায় নাই। সময়ই উহা বলিয়া দিবে।

তারপরও পথিক এই জগতে পদার্পন করিল, এবং এভাবেই উহা সদর্পে জানাইয়া দিল।
কেউ জানাক না জানাক, পথিক অতঃপর নিজেই নিজেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে স্বাগতম জানাইল।