Sunday, August 17, 2008

মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড এনি

এনির নামটা প্রথম শুনেছিলাম, থুক্কু পড়েছিলাম, বসের ইমেইলের সিসি ফিল্ডে। ইমেইলটি ছিল অঘোষিত এক্সেপ্টেন্স লেটার, আমার ইন্টার্নশিপ এপ্লিকেশনের।
এনির সাথে দেখা হয়েছিল পরেরদিন অফিসে গিয়ে। খুব সুন্দর একটা টোল পড়া হাসি দিয়ে ধবধবে সাদা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বরণ করে নিল চাইনিজ চেহারার মেয়েটি। জানতে পারলাম ওর জন্ম তাইওয়ানে হলেও ছোট বেলায় এমেরিকায় মাইগ্রেট করে এখন ও পুরোদস্তুর এমেরিকান। আপাততঃ মাসখানেকের জন্য বোস্টন অফিস থেকে ওকে পাঠানো হয়েছে চিটাগং অফিসটা সেটল করা পর্যন্ত থাকার জন্য।

তখনকার ছোট্ট অফিসটায় জুনিয়র সিনিয়র বস সাবর্ডিনেট সবাই মিলে একটা টেবিলের চারপাশে বসে যার যার ল্যাপটপে কাজ করার এক অদ্ভুত সিস্টেমে গিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।প্রতিদিনই মিটিং হতো গত কর্ম দিবসের নানা আপডেট নিয়ে, আর আমার কাজটা ছিল মিটংএ বসে মিনিট টাইপ করা। এনি ছিল তখনো আমার অলিখিত সুপারভাইজার। ওর কাছ থেকেই নানান ধরনের কাজের এসাইনমেন্ট পেতাম আর কাজ শেষে রিপোর্টও করতাম ওকেই।

বস বস শুনালেও ২৫/২৬ বছরের এই প্রচন্ড কাজপাগল মেয়েটি (মহিলা বললে ভুল হবে) কখনোই বস মনে হয়নি। সদা হাস্যোজ্জল এনির স্বভাবই ছিল গম্ভীর মুহুর্ত গুলো তে ওর বিখ্যাত অট্টহাসি কিংবা একটা রসাত্মক কমেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে হাল্কা করে তোলা।

Saturday, August 2, 2008

চিঠি

কতোদি-ইন হয়ে গেল, চিঠি লিখা হয়না! সেই আবেগ মাখা ভাষার, নানান রঙ্গের, নানান ঢঙ্গের, নানান ভাষার চিঠি- কতইনা লিখেছি একসময়।

এখন বুঝি ভুলে যেতে বসেছি চিঠি লিখার ভাষা।

প্রথম চিঠি কবে লিখেছিলাম? মনে পড়ে চার বছর বয়সে মা-বাবার সাথে যখন পাড়ি জমিয়েছিলাম , সেই দূর অজানার দেশে, তখন থেকেই আমার চিঠি লিখার শুরু। "আলিফ বা" আর এবিসিডি তখন শেখা হয়ে গেলেও বাংলা মায়ের বর্ণমালার সাথে তখনও কেবল পরিচয় হবে, হচ্ছে। সখ্যতা হয় আরো পরে- বাবা যখন পার্মানেন্ট ইঙ্কে একটা ঝুলন্ত বোর্ডের গায়ে বর্ণমালা লিখে ঝুলিয়ে দিলেন চোখের সামনে- আর মা যখন দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বাল্য শিক্ষা ধরিয়ে দিলেন হাতে-তারপর থেকে।

Friday, August 1, 2008

একটু এপ্রিসিয়েশন এবং...

খুব বেশি দিন হয়নি আমি এই অফিসে জয়েন করেছি। এখনো স্টুডেন্টের গন্ধ যায়নি গা থেকে। অস্থায়ী ইন্টার্নশিপ করতে করতেই সম্পর্কটাকে আরেকটু স্থায়ী করে নিলাম। আরেকটু স্থায়ী বল্লাম, কারণ এমেরিকান অফিসের বাংলাদেশ অফিসে কেউই স্থায়ী নয়। সবারই একবছরের কন্ট্রাক্ট।
হায়ার এন্ড ফায়ার কেবল একটি ঈমেইলের ব্যাপার। জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখলাম জয়েন করার দু সপ্তাহের মাথায়, আমাদের সিনিয়র মোস্ট স্টাফকে ঢাকার ক্ষুদ্র অফিসে ট্রান্সফার করার মত অবিশ্বাস্য ঘটনা অবলোকন করে।

অফিসটাও যদিও চট্টগ্রামে, বোস্টনের হেড অফিস থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই এখানকার পরিবেশটা হাইব্রিড-এমেরিকান আর বাংগালির মিশেল। বাংগালির স্বভাবজাত পলিটিক্স আর গ্রুপিং ও দেখলাম এ কয়েকদিনেই শুরু হয়েছে (এখানকার অফিসটা ফুল সুয়িং এ চালু হয়েছে কেবল মার্চ থেকে)। আর এদিকে এমেরিকানদের "জব টাইটেল নয়, তুমি কি কাজ কর সেইটাই ইম্পরট্যান্ট" টাইপের মনোভাবও ভালভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

তাই তিন মাসের ইন্টার্নশিপ আর দেড় মাসের চাকুরির মাথায় আমার অনেকধরনের অভিজ্ঞতাই হয়ে গেছে। ইন্টার্ন হিসেবে "যা করার জন্য কেউ নাই" তা সবই করতে হয়েছে, আর এখন যদিও আমার ডেসিগনেশনটা তেমন গালভারি কিছু না, দায়িত্ব চাপায় দেয়ার সময় ভার বইবার শক্তি যাচাই করে না।
এর মধ্যে সময় বেসময়ে অফিস করে শরীরের যাচ্ছেতাই অবস্থা হলেও, একটাই প্লাস পয়েন্টঃ প্রতিনিয়তঃই শিখা হচ্ছে- নতুন কিছ। আর সবচেয়ে বেশি শেখা হচ্ছে পার্থক্যটা, আমাদের আর "ওদের" মধ্যে।

এ কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় একটু হলেও বুঝতে পারলাম, কেন "ওরা" এতো উন্নত, কেন "ওরা" সুপার পাওয়ার হয়ে বিশ্ব চালাতে পারছে।