Tuesday, September 2, 2008

আল জাযিরার সাথে আধা দিন...(২)

গতকাল আসলেই তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম, তাই আসল কথা অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

বাদ পড়ে গেছে, গ্রামের বাড়িতে পৌছা মাত্রই, উঠোনে শুকোতে দেয়া লাল লাল মরিচ ওদের প্রথম আকর্ষন করে। সেই মরিচ দেখে ওদের মাথায় বুদ্ধি এল, এ দিয়েই সখিনার মা'কে পরিচয় করিয়ে দিবে ওরা। ওহহো, যেই মেয়েটির বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, তার নামটাই যে সখিনা, তাই বোধহয় এতোক্ষণ বলে উঠা হয়নি। তো এতোক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এ হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামের কোন ও এক সখিনার বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠার গল্প।



সেই সখিনার সহজ সরল মা কে গিয়ে একেবারে খাটি গ্রামের ভাষায় বুঝাতে গেলাম ওদের পরিকল্পনার কথা। আমার মুখে এমন খাটি আঞ্চলিক ভাষা শুনে যারপরনাই অবাক হওয়া সখিনার সহজ সরল মা সাথে সাথে আরজ করতে লাগল "ইন অইলে ফরে অইব, আগে বোরহা ওয়া খুলন না"(যা হবার তা পরে হবে, আগে বোরখা খুলে বসুন না!)

হাসি চেপে রেখে বসার ঘরে এসে দেখি ততোক্ষনে সো সখিনার বাবার উর্দু জ্ঞানের কথা জেনে গেছেন, এবং বহুদিন পর যেন মাতৃউর্দু ভাষা চর্চা করার সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি মনেই কথা জুড়িয়ে দিলেন। পাশে বসে এলেক্স মন দিয়ে শুনছে। আর পাশে তখন জানালায় দাড়িয়ে একগাদা শিশুর দল জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছে।


পরে সেই কৌতূহলী দর্শকদের ছবি তুলে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এলেক্স, নিজেও ওদের সাথে দারুন এক পোজ় দিয়ে ছবি তুলতে বসে গেল।


এদিকে বসার ঘরে একজনের ইংরেজি মিশেল আর অন্য জনের বাংলা মিশেল উর্দু মিলে মিশে যখন একাকার, ততোক্ষনে ইন্টারপ্রেটার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেখি, একজনের "শিক্ষা বিষয়ে আপনার মতামত জানতে আমি আপনার ইন্টারভিউ নিব" টাকে আরেকজন বুঝলেন "কোরিয়া এবং বাংলাদেশের ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট এর সম্ভাবনা বিষয়ে আমার মতামত জানতে চাচ্ছেন উনি"!!!! এবার মনে হয় আর হাসিটা চেপে রাখতে পারিনি।


যাক, খাওয়াদাওয়ার পর্বটাকে ততোক্ষনে জোর করে বিদেয় দিয়ে কাজে নেমে গেল ওরা। আহমাদ চলে গেলেন ক্যামেরা বসিয়ে কিভাবে এবং কি কি দৃশ্যায়ন করা যায়, তা দেখতে। শেষে সেই লাল মরিচ গুলোকেই বিশ্বজোড়া বিখ্যাত করে দেয়ার সিদ্ধ্বান্ত নেয়া হল। এর পাশেই বসিয়ে দেয়া হল পাটি বিছিয়ে, পরিবারের সবাইকে গোল করে। অভিনয় করে বেশ মজা পেলেন বুঝা গেল, সখিনার মা-বাবা আর ভাই বোন।ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখা সখিনার বয়োবৃদ্ধ দাদিকে এক পাশে বসিয়ে দেয়া হলেও উনার নির্ঘাত বিন্দুমাত্র ধারনা নেই ঐ ভিনদেশী লোকগুলো ঐ কাল যন্ত্র দিয়ে উনার পরিবার কে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়ার "ষড়যন্ত্র" করতেই এখানে হাজির হয়েছে!!

কৌতূহলী শিশুর দলকে তখন জোর করে বের করে দিয়ে গেট আটকে দেয়া হয়েছিল । কিন্তু তাতে কি আর তাদের কৌতূহলের বিন্দুমাত্র নিবারন হয়? গেটের নিচের ফাক দিয়ে বাচ্চাদের উকি দিয়ে দেখার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে বাদ রাখেননি মিস্টার সো।


এরপর সখিনার মায়ের দৃশ্যায়ন করা হল, উনি মরিচগুলো বিলিয়ে দিচ্ছেন, আর পাশে বসে সখিনার বাবা গল্প করছেন। স্টেজ করা গল্প আর কি হতে পারে? শুনা যাচ্ছিল উনি বলছেন "সখিনা মা, তোয়ার মরিচ্চুনর দাম বারি গেইল গইদে এনা দেহির"(সখিনার মা, তোমার মরিচ গুলোর দাম আরো বেড়ে গেল দেখি)। "মরিচের দাম এমনিতে যথেষ্ট বেড়ে আছে, আর বাড়ার দরকার নেই"দূর থেকে জবাব দিল সখিনা...
আর এই দৃশ্যে ব্যাকড্রপ হিসেবে দারূন ভূমিকা পালন করল গোয়াল ঘর, তার বাসিন্দা একটা গরু, আর গরু মহাশয়ের খাবার সেই খড়ের গাদা!



ঘরের দরজায় দাড়িয়ে সখিনার বৃদ্ধ দাদা দেখতে লাগলেন এই দৃশ্য। নাতিন উনাকে বুঝাল এইসব লোক বেড়াতে এসেছেন এইখানে। "চিনি দি সরবত দে গরবারে"(মেহমান কে চিনি দিয়ে সরবত করে দে)- উনার সহজ সরল আদেশ।

(ছবি যোগ করতে সমস্যা হচ্ছে, তাই এই পোস্টটাকে দুই ভাগে ভাগ করে দেখি ছবি সব দেয়া যায় কিনা)

3 comments:

Anonymous said...

সেহেরীর পর ৩ ঘন্টা হলো জাগা...
যাক!! বৃথা জাগিনি!!
ছবি গুলো Picasa Web Album দিয়ে দিলে ভালো হয়।
Gmail –er. Search dilei paoa jabe.
After all… বেশী ছবি কে না দেখতে চায়!!

এই মাসে না হয় একটু বেশী মেগাবাইট পেমেন্ট করতে হলো।
~মি. অনন। heh heh heh…:D

যাযাবর said...

ওয়াও, আসলেই দারুন অভিজ্ঞতা। ওরা কখন প্রচার করবে আগেই জানিওতো, তাহলে বাসায় বলতে পারবো। ওরা দেখবে। আমার এখানে কোনো চ্যানেল নাই ;( খালি দুই তিনটা অজি চ্যানেল ;( ... আর শোনো, যত ব্যাস্ততাই থাকুক, ব্লগ লেখা বন্ধ করলে খুব খারাপ হবে কিন্তু। কারন আমি তোমার ব্লগটাকে আমার ব্লগ লিস্টে নিয়ে যাচ্ছি। ছোট ছোট করে হলেও লিখবা। তোমার লেখা পড়তে খুব মজা লাগে।

ochena_pothik said...

গতরাতে অনেকক্ষন চেষ্টা করেও ছবি সহ পোস্ট করতে পারিনি।
পিকাসা ওয়েব এলবামে দেয়ারো চেষ্টা করেছি, একাঊন্ট নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে আলাদা পোস্টে ছবি দিতে হবে।