Monday, September 1, 2008

আল জাযিরার সাথে আধা দিন...

‘মিডিয়ার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছেঃ “মিডিয়ার কাছে “বাংলাদেশ” বলতে ঠিক কি বুঝানো হয়?”’ প্রশ্নটা করছিলাম আল জাযিরার নিউজ প্রেজেন্টার এওয়ার্ড উইনার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মুসলিম সোহেল রহমান কে।
নিশ্চয় ভাবছেন সুযোগটাই বা কোথায় পেলাম? হুম, তাই বলতেই আজ অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও, রমজানের ঠিক আগের দিন রমজান বিষয়ক পোস্ট না করে এমন একটা পোস্ট লিখতে ব্লগে ঢুকলাম।
ঘটনার শুরু গত সোমবারের অফিসের স্টাফ মিটিংএ, যখন জানানো হল আল জাযিরার প্রতিনিধি আসবে আমাদের ইউনি কভার করতে, আগামী সোমবার। প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেল ওদের জন্য নানা আয়োজনের। অন্যান্য প্রতিবার আমাকে এইখানে কোনো না কোন দায়িত্ব দিয়ে রাখলেও এইবার তেমন কোনো দায়িত্ব ছিল না ভেবে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছিলাম পুরো সপ্তাহ জুড়েই।
আজ যথারীতি চলে আসল আল জাযিরার ৪ জনের একটা টিম। সিনিয়র স্টাফদের ব্রিফিং, এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর আর ডীন মহোদয়া গণ দের ইন্টারভিউ ও নিয়ে ফেলল ওরা, সেই সাথে ক্লাসরুমের কিছু ছবিও।
তারপর হঠাত জানান হল, এতোদিন ধরে ছাত্রীদের দিয়ে যত্ত সব কর্মকান্ড দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এইসব ওরা তুলতে চায়না, ওদের ইচ্ছে কোন ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি ঘুরতে যাবে আর দেখাবে এইখানে ঠিক কত গ্রামীণ পরিবেশের মেয়েরা আসার সুযোগ পেয়েছে।
উড়ে এসে জুড়ে বসানোর মত আমাকে এনে বসিয়ে দেয়া হল ওদের সাথে গাড়িতে, যেতে হবে চন্দনাইশ, যা কিনা প্রায় এক ঘন্টার পথ চট্টগ্রামের মেইন টাউন থেকে।

যেতে যেতেই কথা হচ্ছিল নানা বিষয়ে আল জাযিরার এই টীমের সাথে। জানতে পারলাম ওদের বাংলাদেশে কোন ব্যুরো নেই, এইখানে আসা টীমের একজন, যার মুখে বাংলা কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম, সেই জনাব তানভির সাহেবই ওদের পুরো “বাংলাদেশ ব্যুরো”। সেই সাথে ছিল ব্রিটিশ মহিলা এলেক্স, দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক খবর দেখাশোনা করা যার মূল দায়িত্ব। ক্যামেরার সামনে থাকার জন্য নিউজ প্রেজেন্টার সোহেল রহমানের কথা তো বললামই, তবে যা বলা হয়নি তা হচ্ছে ব্রিটিশদের কাছে যেহেতু “সোহেল” নামটি নাকি অনেক বড় (??), তাই সো (so!!) নামেই উনার পরিচয়! আর ক্যামেরার পিছনে থাকার জন্য যে বিশাল দেহের লোকটি ঘর্মাক্ত শরীরে বারবার “sweat-tastic” (সোহেল সাহবের ভাষ্যমতে) কাজটি করে যাচ্ছিলেন, সেই আরবীয় চেহারার মানুষটি ইজিপশিয়ান আহমাদ।
শুরু করেছিলাম ওদের কাছে করা প্রশ্নটা দিয়ে, এইবার আসা যাক সেই প্রশ্নের উত্তরে। সো সাথে সাথেই বলে উঠলেন, “কি আর, পাকিস্তান বলতে যেমন “ওরা” দাড়িওয়ালা বন্দুকধারী কোন কাবুলি পরা লোক বোঝে, তেমনি বাংলাদেশ মানে “সাইক্লোন” আর “ফ্লাড”এ ডুবে থাকা একটি অতি দরিদ্র দেশই বুঝে।”
তানভির সাহেব এর মধ্যে শেয়ার করলেন, ওনার এক ফ্রেঞ্চ বন্ধু নাকি একবার প্রশ্ন করেছিলেন “ডু ইউ গাইজ় লিভ অন ট্রিজ?”!! এমন প্রশ্নের কারন জানতে চাইলে বন্ধু বলেছিল, “ইউর কান্ট্রি ইজ অল ওয়াটার”!!!
সো বলতে লাগলেন কিভাবে উনার বিবিসির বন্ধুরা পাকিস্তানে উনাদের বাপের দিনের বিশাল বাড়িতে গিয়ে ভীষন অবাক হয়ে বলেছিল, “এন্ড ইউ কল দিস এ হোম অফ আ মিডল ক্লাস ফেমিলি?”। বলেই যোগ করলেন্ “ব্রিটেনে তো আমরা বলতে গেলে বক্সে থাকি! এই এতটুকুতে ছাদ (মাইক্রোবাসের ছাদে হাত দিয়ে), আর অল্প একটু জায়গা-এইটাই বাড়ি”। “ওয়েস্টার্নদের কাছে আমাদের দেশগুলো সম্পর্কে ধারনা এমনই। এমেরিকার দিকে দেখ, কাটরিনা ওদের কেমন কাপিয়ে দিল! গুস্তাভ দেখে ওরা কেমন ভয় পাচ্ছে! অথচ দেখ, বাংলাদেশের লোকেরা এইসব প্রতি চার মাসেই দেখে!”
“তাহলে মিডিয়া বাংলাদেশের এই দিকটা কেন হাইলাইট করেনা? কিভাবে, কেমন দৃঢ়তার সাথে এই দরিদ্র মানুষগুলো সাইক্লোন, বন্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হচ্ছে, তা কি কখনো খবরে আসতে পারেনা?” শাহীন ভাইয়ের “একজন প্রেসিডেন্টের ইমেইল এবং আমাদের নেগেটিভ মনোভাব” শীর্ষক আর্টিকেলটি সম্প্রতি পড়েছিলাম বলে ঐখান থেকে আইডিয়া ধার করে প্রশ্নটি করেই ফেললাম।
“দেখ, ভাল জিনিস কখনই সংবাদ হয়না, কেউ হ্যাপি নিউজ কখনো প্রচার করেনা, এইটাই নিয়ম” -ওদের মন খারাপ করা জবাব।
এলেক্স তো বলেই উঠল, “’নিউজ’ শব্দটা বাই ডেফিনিশনই এমন, কেবল নেগেটিভ কিছুই নিউজ হওয়ার দাবী রাখে”।
নিউজ নিয়েই যাদের চব্বিশ ঘন্টা উঠা বসা, তাদের জবাব মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় না দেখে কি আর করা ভাব নিয়ে জানালার বাইরে মন দিলাম।
দুদিকের সবুজ ধানক্ষেত দেখতে দেখতে বিবর্ণ কাতারে থেকে অনেকদিন সবুজ না দেখা এই লোকগুলো দারুন উপভোগ করতে লাগল এই যাত্রা। এলেক্সের ক্যামেরা তখনও অক্লান্ত ভাবে ছবি তুলতেই আছে..., আর এদিকে কর্ণফুলী পেরিয়ে তখন গাড়ি ছুটে চলেছে চন্দনাইশের দিকে।
চন্দনাইশের বিদ্যানগরের পরেই রৌশনহাট, যেখানে আমাদের গন্তব্যস্থল। গ্রামে পৌছার একটু আগেই খেয়াল করলাম, এলেক্স ব্যাগ থেকে উড়না বের করে জড়িয়ে নিয়েছে।
পৌছুতে না পৌছুতেই, গ্রামের ছেলেপুলেরা ততোক্ষনে ভীড় করে ফেলেছে বাড়িটি। খবর পেয়ে আগেই ওর মা বাবা হাজির তো হয়েছেই, সেই সাথে নানা ফলমূল, সরবতের আয়োজন ও করে রেখেছে.।
অনেকবার না খেতে চেয়ে কোনো লাভ হলনা।
“এই সব তোমাদের মানতেই হবে, দেয়ার ইজ নো ওয়ে ইউ ক্যান স্যায় নো- দিস ইজ আউয়ার লোকাল বাংলাদেশি ট্র্যাডিশন” জানিয়ে দিলেন তানভির সাহেব।
.........
(আজকেই শেষ করার ইচ্ছে ছিল, শেষ করতে পারছিনা বলে দুঃখিত। বাকি অংশ কাল ইনশাআল্লাহ ...। রমজানের শুভেচ্ছা সবাইকে। এখনই না ঘুমালে কাল হয় সেহরি মিস করব, অথবা অফিসে বসে ঘুমাব)

3 comments:

নিঝুম said...

আবার একাট দারুন পোষ্ট লিখলেন, আজানা । যাকে বলে সুখপাঠ্য লেখনি :DD পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম... :))



আজাইরা অপবাদ দেবেন না দয়া করে । তৈল উতপাদন জাতীয় কোন কাজে বিস মনোনিবেশ করে নাই । সত্য কথা বলসে.. :-|

:D

মাহমুদ রহমান said...

এলেক্স তো বলেই উঠল, “’নিউজ’ শব্দটা বাই ডেফিনিশনই এমন, কেবল নেগেটিভ কিছুই নিউজ হওয়ার দাবী রাখে”।

..... ওরা এইসব ভুল বলে। এইসব করে দুনিয়াটার বারটা বাজিয়েছে, সব খারাপ খবরে ভরে গেছে দুনিয়া। মানুষ যা শুনতে চাই তা-ই শুনাতে হবে! পুরা কমার্শিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি। ঘটনার সত্যটাই নিউজ, আর সবই ফেব্রিকেটেড নিউজ।

আমি তো এই পঁচিশ বছর বাংলাদেশেই আছি। জীবনে একবার একটু সাইক্লোন স্বচক্ষে দেখেছিলাম, যা পৃথিবীর তাবৎ মানুষেরই বোধহয় অভিজ্ঞতায় থাকে। কোন বন্যা টন্যা নিজের চোখে দেখিনি কেবল রাস্তায় পানি ওঠা ছাড়া।.... ওঁদের বর্ণনা শুনলে মনে হবে আমরা বোধহয় কেবল পানির মধ্যে হাবুডুবু খাই আর বাতাসের সাথে লড়াই করি।

HJKL said...

একদিন একজন জিজ্ঞেস করেছিল--- "আচ্ছা, তোমাদের দেশে কি ইলেক্ট্রিসিটি আছে ??? বাস আছে ???? ওই গাধী বিদেশিনির ধারণা এই দেশ এতই গরীব, যে বাসই নেই এ দেশে।

উত্তরে বলা হল--- "নাহ, আমাদের দেশে কোন বাস নেই। হাতি সার্ভিস চালু আছে সারা দেশে। হাতির পিঠে করেই যাতায়াত করা হয়।"


পরদিন কি অফিসে গিয়ে ঘুমিয়েছিলেন ???