Wednesday, September 17, 2008

জীবন মানে কি একটি অসম্পূর্ণ জিগস' পাজল?

এই দুদিনের পান্থশালায় আবির্ভূত হয়েছিলাম পরিবারের অষ্টম সদস্য হয়ে! অর্থাত আমাকে দিয়েই ভাইবোনদের সংখ্যা এক হাতে গুনার দিন শেষ হলো। শেষ প্রান্তে যখন যোগ হলাম, তখন ও প্রান্তের বড় জন স্কুলের গন্ডির শেষ প্রান্তে। এর পরের বোনেরা হয়তো তখন বেণি দুলানোর দিন পার করে দিয়েছেন। পরের ভাইটা কেবল তখন গণনা শিখছে-আমাকে দিয়ে ভাই বোনদের সংখা সমান সমান হওয়াতে ও নাকি খুব খুশি হয়েছিল। এর পরের ভাইটা অবশ্য তখনও কেবল পন্ডিত বাবু হয়ে উঠছে-যে বয়সে সব বাবুরাই তা হয়, ওর ও তখন সেই বয়স।

এত্তো ভাইবোনের আড়ালে তাই বেড়ে উঠাটা দুঃখের চেয়ে আনন্দের বেশি ছিল। খেলার সাথীর যেমন কখনো অভাব হয়নি, তেমনি হয়নি রাংগা চোখেরও...।

দেখতে দেখতে সময় চলে যায়- সময়ের "আপন গতি" যে কখনও স্রোতস্বিনী নদী কিংবা নায়াগ্রা ফলসকেও হার মানায়, তা সময় চলে না গেলে বুঝার উপায় নেই।



সেই অটুট বন্ধনের ছোটবেলা পেরিয়ে ধীরে ধীরে সবাই বড়বেলায় পা দিতে লাগল- আর সেই সাথে ঢিলে হতে লাগল বন্ধনের সুতোটাও।

বড়াপুর বিয়ের পর চলে গেলেন বিদেশ বিভুঁইয়ে। মেজ আপু বিদেশে না গেলেও শ্বশুরালয়ে। বড় ভাইয়া বিয়ের পরও ভাবিকে নিয়ে অনেকদিন কাছে ছিলেন, কিন্তু ক্যারিয়ার গড়তে তিনিও চলে গেছেন দূরে- দেশের ভেতর থাকলেও দেখা হয় কয়েক মাসে। মেঝ ভাইটা টিন এজ না পেরুতেই দেশে দেশে। জীবনে কখনো নাম না শুনা শহর ঘুরে টুরে এখন গিয়ে ঠিকানা গড়েছে যেথায়, সেথায় নাকি নিশীথেও সূর্যের দেখা মেলে।

ছোট ভাইয়াটা বাকি ছিল, তাও চারটি বছর দূরে কোথাও পার করে দিয়ে এসে গত একটি বছর যা ছিল। এইতো দু'দিন আগে, সেও উড়াল দিল আরেক অজানার দেশে।

ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঘরটায় তাকিয়ে দেখি কেবল আমিই রইলাম বাকি, ভাগশেষ হয়ে।

বাবার দেখা পাইনি অর্ধেকটা রমজানেই। তিনিও উড়াল দিয়েছিলেন। বাকি অর্ধেকটাতেও কয়টা দিন একসাথে ইফতার করতে পারব জানা নেই। হয়তোবা এরই মধ্যেই উনার পুরো মাসের সবক'টি দিনই কোথাও না কোথাও ইফতারের দাওয়াতের বুকিং দেয়া হয়ে গেছে।

যোগফল বলি আর গুণফল, ফলাফল কেবলই শূণ্য।
...............
ছোটবেলায় একটা জিগস' পাজল ছিল আমাদের। পুরোটার সমাধান করলে হয়ে উঠতো মেঝের অর্ধেক জুড়ে থাকা পুরো বিশ্বের মানচিত্র। একবার সবাই মিলে সমাধান করলাম-অতি কষ্টে। তারপর চীটিং এর আশ্রয় নিয়ে ভাইয়া আর আপুরা মিলে পিসগুলোর নিচে সংখ্যা বসিয়ে না দিলে পাজলটির সমাধান আর কখনওই করা হয়ে উঠতো না।।

এতোদিন পর নিজেকে ঐ জিগস' পাজলের ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য টুকরোর আরেকটি খুচরা টুকরোর মত মনে হচ্ছে...।

শেষ যে কবে সবাই একসাথে হয়েছিলাম, এখন আর মনে পড়ে না। পাঁচ বছর তো হলোই। আবার কবে সবার একসাথে হওয়া হবে-কিংবা এই ইহজগতের ক্ষণিকের পান্থশালায় তা আদৌ আর হয়ে উঠবে কিনা, কেবল ঐ উপরওয়ালাই জানেন।
...............

সতেরশ' পঞ্চাশ বর্গ ফিট জুড়ে এখন কেবল আমি আর মা। যে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে হাজারের উপর মানুষের বাস, সে দেশে এই সংখ্যাটা বড্ড বেশি বেমানান হয়ে গেল না?

10 comments:

যাযাবর said...

মারাত্নক লিখেছো।...... বুকের ভিতর কেমন হু হু করে উঠলো এই লেখাটা পড়ে। .....

ochena_pothik said...

ছোটটার সাথে সবসময় কারনে অকারনে ঝগড়া করাটাই অভ্যাস। হাবিজাবি নেট ব্রাউজ করে ইন্টারনেটের বিল তুলে, কিন্তু কখনও টাকা দেওনের নাম নাই। কথায় কথায় সবার সামনে অপমান করতেও বাদ রাখেনা।
ওর চলে যাওয়া দেখতে সেহরির পরের অতি আবশ্যকীয় ঘুমটাকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে বলে তাও দেখিনি।

সেই ভাইটার চলে যাওয়ার পর বুকের ভেতর এমন হু হু করবে জীবনে ভাবিনি।

দুঃখিত আপু, অন্য কারো বুকে হু হু করুক তা চাইনে।

Anonymous said...

দারুন লিখেছেন, দারুন। পড়লাম, স্মৃতি হাতড়ালাম।

মাহমুদ রহমান said...

চমৎকার লিখেছেন।

Anonymous said...

হৃদয়ের চাপা কষ্টের বহিঃপ্রকাশ- কিভাবে সবার ভাল লাগছে বোধগম্য হচ্ছেনা।
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভোরের কোলাহ্ল এবং মাহমুদ ভাই।

toxoid_toxaemia said...

তোমার অর্ধসমাপ্ত লেখাটা শেষ পর্যন্ত সমাপ্তির মুখ দেখল। বুঝতে পারছি যে চোটবেলা থেকেই এত মানুষের মধ্যে বড় হয়েছ তাই এমন একাকী বোধ করাটাই স্বাভাবিক। আর বোনরা একটু বেশিই ফিল করে ভাইদের জন্য আমার মনেহয়। প্রথমবার পড়ে যে খুব মনটা খারাপ হয়েছিল তা তো তোমাকে বলেছিলাম তখন। এখন ভাবলাম কিছু একটা লিখি তাই এখানে। তোমার একাকীত্ব ঘুঁচে যাক। শুভকামনা রইল।

Anonymous said...

হুম। এখন কেবল মনে হয়, জীবনটাই একটা অসমাপ্ত খেলাঘর। এতো আয়োজন বিয়োজন সংযোজনের কিইবা দরকার।

শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ টক্স।

toxoid_toxaemia said...

আরে !!! তোমার আবার কি হয়েছে ??
এতো বিষণ্ণ কথাবার্তা শুরু করলে কেন ???

মাল্যবান said...

এই লেখাই " লেখা " । ধন্যবাদ।
মাল্যবান
http://malyaban.blogspot.com

HJKL said...

এই জীবনের মানে যে কি???? আজো বুঝলামনা..... ভবিষ্যতে বুঝতে পারব কিনা.... তাও জানিনা.....